বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা: স্বস্তির নতুন দিগন্ত!
অবশেষে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য স্বস্তির খবর এলো মালয়েশিয়া থেকে। বহু প্রতীক্ষিত মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে দেশটি, যা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য এক যুগান্তকারী অগ্রগতি। এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক কোনও ঘোষণা নয়, এটি হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের দীর্ঘদিনের জটিলতা ও সীমাহীন ভোগান্তির বাস্তব সমাধান।
গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি জানান, গত মে মাসে মালয়েশিয়া সফরের সময় তিনি ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা–সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনার প্রেক্ষিতে অবশেষে ১০ জুলাই মালয়েশিয়া সরকার একটি পরিপত্র জারি করে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালুর ঘোষণা দেয়।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে সময় দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরপর থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে কার্যকরভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালকের স্বাক্ষরে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিপত্র জারি করা হয়।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো—যেসব বাংলাদেশি কর্মীর পরিপত্র জারির আগে সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা এবং টেম্পোরারি এমপ্লয়মেন্ট ভিজিট পাস (পিএলকেএস) ইস্যু করা ছিল, তাঁদের নতুন করে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে না। পিএলকেএস নবায়নের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ইস্যু হয়ে যাবে।
এ ছাড়াও, যাঁদের পিএলকেএস বৈধ আছে এবং পূর্বে যাঁরা সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা পেয়েছেন, তাঁরা নতুন মাল্টিপল ভিসা ছাড়াই মালয়েশিয়া থেকে দেশে যাওয়া-আসা করতে পারবেন। এই বিষয়ে মালয়েশিয়ার সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে যথাযথ পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল আরও বলেন, মালয়েশিয়া বিশ্বের প্রায় ১৫টি দেশ থেকে কর্মী নিয়ে থাকে। কিন্তু শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই এতদিন সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসার বিধান কার্যকর ছিল। এতে বাংলাদেশি কর্মীরা নানা ধরনের প্রশাসনিক জটিলতা এবং পারিবারিক দুর্ভোগে পড়তেন। অল্প সময়ের জন্য দেশে গেলেও নতুন করে ভিসার জন্য আবেদন করতে হতো, যা সময় ও অর্থ—উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে এক বড় পদক্ষেপ।
মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা চালু হওয়ার ফলে এখন থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা প্রয়োজনে দেশে এসে আবার মালয়েশিয়ায় ফিরে যেতে পারবেন কোনও বাড়তি ভিসা জটিলতা ছাড়াই। এটি শুধু একটি নীতিগত পরিবর্তন নয়, এটি প্রবাসীদের প্রতি একটি সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। মালয়েশিয়ায় কর্মরত হাজার হাজার বাংলাদেশি এখন এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এক নতুন স্বস্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করবেন।
এই উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দূতাবাস এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দলের সক্রিয় ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। বাস্তবিক অর্থে এটি শুধু কাগজে–কলমে একটি ঘোষণা নয়, এটি প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে এমন একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।

যেকোনো ধরনের তথ্য জানতে টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন দেশের ভিসা সম্পর্কে আপডেট পাবেন। ফ্রি ভিসা তথ্য ও সার্ভিস পেতে এখনই লিংকে ক্লিক করে আমাদের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেল যুক্ত হোন: বিডি ভিসা তথ্য
